
পৃথিবীজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া নতুন এই মহামারী ঠেকানোর জন্য মানুষকে ঘরে অবরুদ্ধ রাখা ও বেশি বেশি সংখ্যক সম্ভব নমুনা সংগ্রহ/পরীক্ষা করাই প্রধান নতুন কৌশল হয়ে উঠা হলেও জাপান এগুলোর মধ্যে তেমন কিছুই করেনি।
মানুষের চলাচলের ক্ষেত্রে বড় কোনো ধরনের বিধিনিষেধ/নীতিমালা আরোপ করেনি দেশটির সরকার; খোলা ছিল যেকোন প্রকারের রেস্তোরাঁ, এমনকি হেয়ার ড্রেসার সেলুন গুলোও। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রনে রাখতে ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে কনট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ এর নির্ভরশীলতা বাড়লেও প্রযুক্তিতে বিপ্লব ঘটানো দেশ জাপান এই রকম কোন কিছু মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়নি।
জাপানে এখনও পর্যন্ত শূন্য দশমিক দুই শতাংশ পরীক্ষা করা হয়েছে; অর্থ্যাৎ পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি নমুনা পরীক্ষার হারেও বিশ্ব থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে ।
এই সমস্ত কার্যাবলী হাতে না নিলেও জাপান করোনার প্রতিদিনের চিত্র নিয়ন্ত্রনে নিতে পেরেছে।
সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত জাপানেও নেই কোনো রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান; তারপড়েও জাপানে মোট মৃত্যু হয়েছে প্রায় এক হাজারের নীচে।
সম্প্রতি জাপানের স্থানীয় কিছু গণমাধ্যমে করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে তাদের সফলতার প্রায় ৪৩টি সম্ভাব্য কারন তুলে ধরা হয়। এই গুলোর মধ্যে মাস্ক পরা, মানুষের অধিক স্বাস্থ্য না থাকা অথবা দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
জাপানিজ ভাষায় কথা বলার সময় মুখ থেকে সাধারণত থুথু/ড্রপলেট কম ছিটকে পড়ে বলে ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে বলে মজার মত পোষণ করছেন অনেক লোক।
কন্টাক্ট ট্রেসিং
করোনা মহামারীর বিস্তার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে জাপানের বিশেষজ্ঞরা কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের ভূমিকাকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। জাপানিরা এই কন্টাক্ট ট্রেসিংকে বেশি জোর না দিলেও তাদের বড় একটি সাফল্য ছিল সংক্রমণ শনাক্তের জন্য প্রশিক্ষিত পঞ্চাশ হাজার নার্স, যা অন্য কোনো দেশের নেই।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সবে মাত্র কন্টাক্ট ট্রেসার নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে। কিন্তু প্রথম যখন কোভিড-১৯ রোগী জাপানে শনাক্ত হয় তখন থেকেই তারা তাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজে লাগিয়েছে। অন্য সময় ইনফ্লুয়েঞ্জা ও যক্ষ্মার সংক্রমণ শনাক্ত করাই ছিল তাদের প্রধান কাজ। এপ্রিল থেকে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর পর থেকে তাদের সকলকে কাজে লাগাচ্ছে জাপান সরকার।
‘থ্রি সি’ মন্ত্র
সকলকে সম্পূর্ণ আলদা না রেখে ‘ক্লোজড স্পেস’, ‘ক্রাউডেড স্পেস’ এবং ‘ক্লোজড কনট্যাক্ট’ থেকে দূরে থাকা এই তিনটি মন্ত্র (থ্রি সি) মেনে কাজ করেছে জাপান। জাপানের এই মন্ত্রকে অনেক বাস্তব ও বিজ্ঞান সম্মত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।