
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে রোববার। কিন্তু প্রথম দিনেই হুলগুলোর গণরুমে উঠে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এত দিন গণরুম বন্ধের যে কথা বলছিল, তা শুরুতেই ধাক্কা খেল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসনসংকটের কারণেই গণরুম-ব্যবস্থা চালু হয়। গণরুমে এক কক্ষে অনেক শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে থাকেন। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন এই কক্ষগুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এসব কক্ষে ওঠা নবীন শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে হয়, পোহাতে হয় ‘গেস্টরুমের’ বিভীষিকাও।
কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলে আসছিল, ছাত্রত্ব শেষ হওয়া শিক্ষার্থীদের হল থেকে বিতাড়িত করা হবে। পাশাপাশি হলগুলোতে থাকা গণরুম–ব্যবস্থা বন্ধ করা হবে। স্বাস্থ্যবিধির নীতিমালা অনুসরণের কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু ৫ অক্টোবর স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য হলগুলো খুলে দেওয়ার পর সেদিন সন্ধ্যা থেকে অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থী এবং অছাত্ররাও হলে উঠে পড়েন। ফলে শুরুতেই অছাত্র বিতাড়নের পরিকল্পনা ধাক্কা খায়।
কর্তৃপক্ষ এরপর ঘোষণা দেয়, ১০ অক্টোবর (গতকাল) থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে পারবেন। এই খবরে গতকাল সকালের পরপরই ক্যাম্পাসে জড়ো হন প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা, যাঁদের বড় অংশ হলে বৈধ আসন না পেয়ে গণরুমগুলোতে থাকেন। সকালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল ও রোকেয়া হল পরিদর্শন শেষে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান গণরুম সংস্কৃতি বাতিলের পক্ষে মন্তব্য করেন।
উপাচার্যের এই বক্তব্যের কিছুক্ষণ পরই গণরুমে উঠে পড়েন শিক্ষার্থীরা। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের ফটকের বাইরে শ খানেক শিক্ষার্থী অবস্থান নেন। প্রথমে হল কর্তৃপক্ষ তাঁদের গণরুমে ওঠার অনুমতি দেয়নি। পরে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতারা আলোচনায় বসেন। ছাত্রলীগ নেতারা হল কর্তৃপক্ষকে গণরুম খুলে দেওয়ার জন্য চাপ দেন। সেখানে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয় বলে জানা গেছে। আলোচনার পর কর্তৃপক্ষ গণরুম খুলে দেয়।গতকাল বিকেলে বিজয় একাত্তর হলের গণরুমে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা সেখানে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করছেন। ময়লা কাপড়চোপড় ও আসবাবপত্র বাইরে ফেলে দিচ্ছেন। একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার আগে আমরা গণরুমেই থাকতাম।
আজ (গতকাল) হলে ওঠানো হবে—এই খবর পেয়ে ঢাকায় আসি। এসে বেশ কিছুক্ষণ একটা অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম। কিন্তু হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের কারণে আমরা শেষ পর্যন্ত গণরুমে ওঠার সুযোগ পেলাম।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী শিক্ষা পিডিয়াকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি হলগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বাইরে সেখানে কিছু হয়ে থাকলে, তা হল কর্তৃপক্ষ দেখবে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৪ অক্টোবর থেকে চালু হয়েছে করোনা টিকার বিশেষ অস্থায়ী ক্যাম্প। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা চিকিৎসাকেন্দ্রে স্থাপিত এই কেন্দ্রে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত (শুধু সিনোফার্ম) টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হবে। ১ নভেম্বর থেকে দেওয়া হবে দ্বিতীয় ডোজের টিকা।
কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা সারওয়ার জাহান গতকাল সন্ধ্যায় জানান, এ পর্যন্ত পাঁচ দিন ওই কেন্দ্র থেকে টিকা দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিন ২১০, দ্বিতীয় দিন ২৬৫, তৃতীয় দিন ৩৬৫, চতুর্থ দিন ৩৮৭ ও পঞ্চম দিন (গতকাল) ৪০৫ জন টিকা নিয়েছেন। মোট টিকা নিয়েছেন ১ হাজার ৬৩২ জন।