
রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে হলে মাদকমুক্ত সমাজ কায়েম করতে হবে -মাহফিলের বয়ানে পীর মাওলানা মাহমুদুর রহমান
ম. শাহনূর আলম খাঁন মুরাদনগর, কুমিল্লা।।
কুমিল্লার মুরাদনগরের সোনাকান্দা দারুল হুদা দরবার শরীফের দু’দিনব্যাপী বাৎসরিক ইসালে সাওয়াবের মাহফিল সমাপ্ত হয়েছে।
২৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার বাদমাগরিব থেকে শুরু হয়ে ১ মার্চ সোমবার বাদফজর দীর্ঘ ৩৫ মিনিটব্যাপী আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এ মাহফিল শেষ হয়।
প্রতিবছরের ন্যায় লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগম হয়েছে এ মাহফিলে। প্রথমদিন শনিবারে দরবারের ৪ টি মাঠ মুসল্লীতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়। শেষদিন রবিবার সন্ধ্যায় দরবারের ৬টি প্যান্ডেলসহ কোথাও তিল ধারণেরও ঠাঁই ছিল না।
দু’দিনব্যাপী মাহফিলে প্রতিদিন বাদমাগরিব দরবারের গদ্দিনশীন পীর ও বাংলাদেশ তা’লিমে হিযবুল্লাহ’র আমীর শাহসুফি হযরত মাওলানা অধ্যক্ষ মাহমুদুর রহমান (দা.বা.) তা’লীম পেশ করেন।
চিশতীয়া,কাদেরীয়া, নকশবন্দীয়া ও মোজ্জাদ্দেদীয়া এই ৪ তরিকার জিকিরের তা’লীম পেশের সময় জিকিরের ধ্বনিতে চারপাশ মুখরিত হয়ে উঠে।
তালিম শেষে পীর সাহেব সকল মুসলিম উম্মাহকে লক্ষ্য করে পবিত্র কুরআন – হাদিসের আলোকে মাদক দ্রব্যের কুফল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নসিহত পেশ করেন।
নসিহতে তিনি বলেন, ‘কোন পরিবারে একজন নেশাগ্রস্ত লোক থাকলে তার জন্য গোটা পরিবার ও সমাজ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়। বর্তমানে দেশের এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে মাদকের ব্যবহার হয় না। গোটা রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে হলে আগে সর্বত্র মাদক মুক্ত সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। মাদকাসক্ত ব্যক্তির ইবাদত কবুল হয় না। এই মাদকাসক্ত লোক দ্বারা দেশে হত্যা, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি সংগঠিত হচ্ছে। কোন সুস্থ প্রকৃতির লোক দ্বারা সমাজের অকল্যাণ সাধিত হয় না। তাই ইহকালীন ও পরকালীন জীবনকে সুন্দর করে সাজাতে আল্লাহর রাসুলের ঘোষিত সকল প্রকার হারাম মাদক দ্রব্য থেকে সবাইকে মুক্ত থাকতে হবে’।
তিনি আরো বলেন, ‘দেশের প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে জিকিরের মাহফিল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এক সময় প্রত্যেক ঘরে ঘরে ভোর বেলায় জিকিরের মাধ্যমে তাদের দৈনন্দিন কাজ শুরু করা হত। তখন অল্পতে পরিবারের সুখ শান্তি রহমত বিরাজ করত। এখন আয়-উপার্জন বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু পারিবারের সুখ সমৃদ্ধি বৃদ্ধি হচ্ছে না। কারণ, সমাজ থেকে জিকির প্রায় উঠে গেছে। জিকিরের মাধ্যমে আত্মা পরিশুদ্ধ হয়’।
বাংলাদেশ তথা বিশ্ববাসী ও মুসলীম উম্মাহর কল্যাণ এবং মাহফিলে আগত সকলের মনের নেক বাসনার পূর্ণতা কামনা করে মহান আল্লাহর নিকট মোনাজাত করা হয়। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন সোনাকান্দা দারুল হুদা দরবার শরীফের পীর শাহ সূফী মাওলানা মুহাম্মদ মাহমুদুর রহমান।
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে বক্তব্য দেন স্থানীয় সাংসদ ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন (এফসিএ), রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদিন, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার, মুরাদনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ তমাল, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো.রফিকুল ইসলাম সরকার প্রমূখ।
দু’দিনব্যাপী ইসালে সাওয়াব মাহফিলের সমাপনী রাতে আলোচনা পেশ করেন মাওলানা মীর মোঃ হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী (ঢাকা), ফতেহাবাদ দরবার শরীফের পীর মাওলানা শফিকুল ইসলাম ,সোনাকান্দা দরবার শরীফের খলিফা ও সৈয়দপুর কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবু তাহের মো.সালেহ উদ্দিন পীর , পিরোজপুর মাঠবাড়ীয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা বেলাল হোসাইন আফসারী,মুফতি মোহাম্মদ শাহ আলম (ঢাকা), মাওলানা শরিফ মোঃ হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী (কুমিল্লা),সৈয়দপুর কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা মজিবুর রহমান, মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক প্রমূখ।
উক্ত মাহফিলে সোনাকান্দা দরবার শরীফ কর্তৃক পরিচালিত সাবেরা রহমান হাফিজিয়া মাদ্রাসার দুজন হাফিজ-ই কুরআন গোলাম সারোয়ার (ধরখার) ও মো. ইসহাক (রামচন্দ্রপুর) কে পীর সাহেব পাগড়ি পরিয়ে দেন।