
সংবাদমাধ্যমে তথ্য সরবরাহের অভিযোগ এনে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় বি ইউনিটে ‘অনুপস্থিত শিক্ষার্থী মেধা তালিকায় ১২তম অবস্থানে আসা’র তথ্য সংবাদমাধ্যমের কাছে সরবরাহ করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ওই শিক্ষকের নাম মাহবুবুল হক ভূঁইয়া। গত রোববার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০তম সিন্ডিকেট সভায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে এ ঘটনায় যাদের গাফিলতিতে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর নাম মেধা তালিকায় চলে আসে, তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোনোরকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো দুই দফায় তদন্ত কমিটি গঠন করে গণমাধ্যমে তথ্য সরবরাহকারীকেই খুঁজে গেছে প্রশাসন। এমনকি তদন্ত প্রতিবেদনও প্রকাশ করতে নারাজ তারা।২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর দৈনিক সমকালে ‘ভর্তি পরীক্ষা না দিয়ে মেধা তালিকায়’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।
সংবাদ সূত্র অনুযায়ী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় এক শিক্ষার্থী পরীক্ষা না দিয়েই মেধা তালিকায় ১২তম হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে ৩০ নভেম্বর বি ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। পাশাপাশি এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়।এ কমিটি ৩ ডিসেম্বর তদন্ত শেষে সংবাদ সম্মেলনে জানায়, এটি ‘জালিয়াতি’ ছিল না। বরং ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী এক শিক্ষার্থী ভুল রোল নম্বর ভরাট করেছিল। আর এ ভুলের কারণে সে রোল নম্বরধারী শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকার পরেও মেধা তালিকায় চলে আসে।
তবে এমন ঘটনা ঘটার পেছনে কাদের গাফিলতি ছিল, তা জানায়নি তদন্ত কমিটি। প্রকাশ করেনি তদন্ত প্রতিবেদনও।একই ঘটনার ধারাবাহিকতায় ১২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যে কমিটির দায়িত্ব ছিল গণমাধ্যমে এ তথ্য কীভাবে গেল, তা খুঁজে বের করা।এ তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের তদন্ত কমিটির দায়িত্ব ছিল এ তথ্য কারা বের করেছে, সেটা খুঁজে বের করা। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্য ও মোবাইলে কথোপকথন বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার সঙ্গে সাংবাদিকের সর্বশেষ কথা বলার ২৬ সেকেন্ড পরেই সংবাদটা প্রকাশ হয়েছে।
এসব তথ্য থেকেই বোঝা যায়, মাহবুবুল হক ভূঁইয়াই সাংবাদিককে তথ্য দিয়েছেন— এ বিষয়টা নিশ্চিত।আসাদুজ্জামান আরও বলেন, আমরা তদন্ত প্রতিবেদনে কার কতটুকু শাস্তি হবে, কী হব— সে বিষয়ে কোনো সুপারিশ দিই নাই। তবে সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই হলে যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তিনি দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন। পাশাপাশি ডিন অফিসও তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছে।এ বিষয়ে সিন্ডিকেটের সদস্য সচিব কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, এ ঘটনায় গঠিত উচ্চতর তদন্ত কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেটা সোমবার সিন্ডিকেটে তোলা হয়েছিল। সেখানে মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক’ তথ্য সরবরাহের যে অভিযোগ, তা সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুসারে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে যাদের কারণে এমন ভুল হল, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি-না— এ প্রশ্নের জবাবে রেজিস্ট্রার বলেন, আসলে ভর্তি পরীক্ষার বি ইউনিটের যে কমিটি ছিল, তাদের এ কাজে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল। উচ্চতর এ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের ব্যাপারে আবু তাহের বলেন, এটা প্রকাশ করা হবে না। যদি প্রকাশ করতে হয়, সেক্ষেত্রে উপাচার্যের অনুমতি লাগবে।সিন্ডিকেটের এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমার কাছে এখনও পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো লিখিত দেওয়া হয়নি। তাই এটা নিয়ে আমি মন্তব্য করতে পারব না।কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ অনুসারে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি কোনো অন্যায় হয়, তবে শাস্তি হবে বা ক্ষমা হবে। আর এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এটার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান-সম্মান জড়িত, এটা কেন আমরা প্রকাশ করব