Home প্রাথমিক শিক্ষা সৃজনশীল শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে শিশুরা!

সৃজনশীল শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে শিশুরা!

সৃজনশীল শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে শিশুরা!

ডা. সুরাইয়া হোসেনের মেয়ে ইশালের বয়স এখন সাত বছর। তিন বছর ধরে সে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলায় নাচ শিখছে। এর মধ্যে দুই বছরই তার অনলাইনে ক্লাস করতে হচ্ছে। ইশাল কিছুতেই ভুলতে পারছে না মেলা ভবনে গিয়ে তার নাচ শেখা, আর অনুষ্ঠান করার কথা। এই তো সেদিন যখন তার মা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুরনো ছবি শেয়ার করলেন, তখন খুবই মন খারাপ করে সে জানতে চাইল কবে আবার রিহার্সেল করতে পারবে!

ডা. সুরাইয়া হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, শুধু তার মেয়েই নয়, অন্য অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন সব শিশুই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিখতে চায়। এতে তাদের মানসিক প্রশান্তি হয়, চাপ কমে। স্কুল বন্ধ হলেও যে কোনোভাবে শিশুদের সৃজনশীল কার্যক্রম শারীরিকভাবে করার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। করোনা মহামারির কারণে একদিকে যেমন বন্ধ হয়ে গেছে শিশুর সৃজনশীল শিক্ষা কেন্দ্রগুলো, তেমনি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান জুমের মাধ্যমে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম আংশিকভাবে চালু রাখলেও গুরুমুখী শিক্ষা ভার্চুয়ালি আয়ত্ত করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। আর অভিভাবক এবং শিশুরাও চায়, স্কুল বন্ধ থাকলেও সপ্তাহে এক দিন অন্তত তাদের সুকুমারবৃত্তির চর্চা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে করতে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের তথ্যমতে, প্রায় ৪ লাখ শিশু ঢাকা শহরে সৃজনশীল শিক্ষার আওতায় আছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার সেগুনবাগিচা কার্যালয়ে ১২ হাজার শিক্ষার্থী আছে। করোনাকালে কমে গেলেও সারা দেশে এই সংগঠনের ১৫০টি শাখায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী আছে। স্বাভাবিক সময় সরকারি প্রতিষ্ঠান শিশু একাডেমিতে ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী থাকলেও মহামারিতে তা ১০ হাজারে নেমে এসেছে। এখানে ভার্চুয়াল বা সশরীরে কোনোভাবেই সৃজনশীল শিক্ষা কার্যক্রম চালু নেই। আর বুলবুল ললিতকলা একাডেমির তথ্যমতে, করোনা-পূর্ববর্তী বছরে এই সময়ে বেশি থাকলেও বর্তমানে তাদের সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষার্থী আছে। ছায়ানটে সাড়ে ৪ হাজার শিক্ষার্থী গান, নাচ, বাদ্যযন্ত্র ও শাস্ত্রীয় সংগীত শিখছে। সারা দেশে লাখ লাখ শিক্ষার্থী খেলাঘরের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।

সংশ্লিষ্টরা যা বলেন: এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার সাধারণ সম্পাদক আলপনা চৌধুরী বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে কোচিংকেন্দ্রিক শিক্ষার একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সৃজনশীল শিক্ষার ওপর। আগের তুলনায় আমাদের শিক্ষার্থীও কমে যাচ্ছে, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব হচ্ছে। এ অবস্থায় কোভিড ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে। আমাদের বৃহস্পতি, শুক্র ও শনি তিন দিন ক্লাস হতো। এখন আংশিকভাবে অনলাইনে শেখানো হচ্ছে। কিন্তু গান, নাচ, সাহিত্যচর্চা জুমে হয় না। অনেক মুদ্রা হাতে ধরে শেখাতে হয়। অনেক উচ্চারণ গলায় গলা মিলিয়ে শেখাতে হয়। তারপরও কিছু করার নেই। মহামারির জন্য আমরা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের চাওয়াকে উপেক্ষা করছি।

গল্প বলা আর কবিতা আবৃত্তির সংগঠন ‘কল্প-রেখা’র সাধারণ সম্পাদক তামান্না তিথী ইত্তেফাককে বলেন, শিশুরা খুব আসতে চায়। আর ভার্চুয়াল শিক্ষাটা শারীরিকভাবে শিক্ষার বিকল্পও হতে পারে না। এটা দায়সারা গোছের একটা ব্যাপার।

বুলবুল ললিতকলা একাডেমির সভাপতি হাসানুর রহমান বাচ্চু ইত্তেফাককে বলেন, আর্থিক সমস্যার মধ্যে শিক্ষক আর শিক্ষার্থীদের আগ্রহে কোনোমতে চলছে তাদের অনলাইন কার্যক্রম।

এ প্রসঙ্গে শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান অভিনেত্রী লাকী ইনাম বলেন, যেহেতু ঢাকার শিক্ষার্থীরা সব সময় অংশগ্রহণ করে, তাই এখন বাইরের শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক হচ্ছে তাদের অনলাইন সৃজনশীল শিক্ষা কার্যক্রম। নিয়মিত শিক্ষা-পরীক্ষা কোনোটাই হচ্ছে না।

খেলাঘরের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, কোভিডের দুই বছরে আমরা শিশুদের শিক্ষার বিষয়গুলো ঠিক করতে পারলাম না। এটা দুঃখজনক। কিছু অসুবিধা থাকলেও খেলাঘর জুমের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে শিশুদের স্বার্থ সবসময় উপেক্ষিত থাকে বলে মন্তব্য করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে প্রায় ৪ লাখ শিশু সৃজনশীল কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। শিশুর মানবিক গুণাবলির বিকাশে এই শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলেও দিন দিন এর গুরুত্ব কমছে। আর সৃজনশীলতার সঙ্গে যুক্ত করার অপ্রতুল প্রচেষ্টাও কোভিডকালে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here